• Thu, Oct 2025

“বঙ্গবাহাদুর এমএজি ওসমানী: মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি ও স্বাধীনতার রণকৌশলবিদকে জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি”

“বঙ্গবাহাদুর এমএজি ওসমানী: মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি ও স্বাধীনতার রণকৌশলবিদকে জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি”

১৯১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন এমএজি ওসমানী।

মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান, বঙ্গবাহাদুর জেনারেল এমএজি ওসমানী (বীর উত্তম)-এর জন্মদিনে জাতি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে।

১৯১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন এমএজি ওসমানী। শৈশব-কৈশোর কাটে সিলেটে। তিনি পড়াশোনা করেন সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, সিলেট সরকারি কলেজ এবং পরবর্তীতে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৪২ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সর্বকনিষ্ঠ মেজর পদে উন্নীত হন। দেশভাগের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং চট্টগ্রাম সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৭ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে অবসর গ্রহণ করেন।

রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং সেক্টর কমান্ডার নিয়োগ দেয়া হয়। দক্ষ রণকৌশল, পরিকল্পনা ও দৃঢ় নেতৃত্বের মাধ্যমে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে পাকিস্তানি সেনাদের বিপর্যস্ত করেন। তাঁর উদ্যোগেই গেরিলা বাহিনী, নৌ-কমান্ডো দল ও ছোট বিমান ইউনিট গড়ে ওঠে, যা যুদ্ধের গতিপথ পাল্টে দেয়।

স্বাধীনতার পর এমএজি ওসমানী জেনারেল পদমর্যাদায় দেশের প্রথম সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত হন। ১৯৭২ সালে তিনি মন্ত্রীসভায় যোগ দিয়ে ডাক, তার, টেলিযোগাযোগ ও নৌ-যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন। তবে ১৯৭৪ সালে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক জীবনে নানা বিতর্ক ও সমালোচনার মুখোমুখি হন। ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় খন্দকার মোশতাক আহমেদের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হলেও জেলহত্যার ঘটনার পর সেই পদ থেকেও সরে দাঁড়ান। ১৯৭৬ সালে তিনি জাতীয় জনতা পার্টি গঠন করেন এবং ১৯৭৮ ও ১৯৮১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হন।

ব্যক্তিজীবনে ওসমানী ছিলেন সাদামাটা জীবনযাপনের মানুষ, দৃঢ়চেতা ও আপসহীন চরিত্রের অধিকারী। সেনাবাহিনীতে যেমন ছিলেন শৃঙ্খলাবদ্ধ, রাজনীতিতেও তিনি ছিলেন স্পষ্টভাষী এবং আপোষহীন নেতৃত্বের প্রতীক।

যদিও রাজনৈতিক জীবনে তাঁর অবস্থান ছিল অনেকসময় প্রশ্নবিদ্ধ, তবুও জাতির কাছে তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয়—তিনি মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, বঙ্গবাহাদুর এমএজি ওসমানী।

তাঁর জন্মদিনে জাতি গভীর শ্রদ্ধা জানায় এই মহান সেনাপতিকে, যাঁর ক্ষুরধার রণকৌশল ছাড়া বিজয় অনেক কঠিন, হয়তো অসম্ভবও হয়ে যেত।